

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও রাস্তায় মাসের পর মাস অবাধে বিক্রি হচ্ছে ‘সর্ব রোগের ওষুধ’। কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালীসহ ফুটপাতের দোকানগুলোতে মাইক বাজিয়ে প্রচার করা হচ্ছে এমন ওষুধ, যা ৭ দিনে যেকোনো রোগ সারানোর দাবি করছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও যেসব জটিল রোগ নিরাময়ে হিমশিম খান, সেই সব রোগের চিকিৎসা এ ধরনের দোকানগুলোতে পাওয়া যায় না।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, রাস্তায় ছালা বিছিয়ে বা ভ্যানের ওপর সাজিয়ে ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস-বি, চর্মরোগ, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, লিভার ও কিডনির সমস্যা, টিউমার, হাঁপানি, বহুমূত্র, নারী-পুরুষের প্রজনন ও যৌন রোগের ওষুধ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে শক্তিবর্ধক ও ‘মোটাতাজা হওয়ার’ ট্যাবলেট।
স্থানীয়রা জানান, এসব ভেজাল ও মানহীন ওষুধ সেবন করে বহু মানুষ ইতোমধ্যে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। বিভিন্ন এলাকায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবুও প্রশাসন থেকে years ধরে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বিক্রেতারা ১০০% নিরাময়ের দাবি করেন, ক্রেতারা আছেন রোগ সারার আশায় যেটি বাস্তবে জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার সমতুল্য।
সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্যে। তবে স্থানীয় অনেকেই যৌন ক্ষমতা বা শরীরচর্চার লোভে ঝুঁকি নিচ্ছেন। দিনের শেষে বিক্রেতারা দোকান গুটিয়ে চলে গেলেও, স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায় ক্রেতার ওপর।
স্থানীয় সচেতন মহল অভিযোগ করেছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মাইক ব্যবহার করে এই অবৈধ ব্যবসা হলেও প্রশাসন ও ওষুধ আইন প্রয়োগকারীরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ড্রাগ অ্যাক্ট অনুযায়ী অনুমোদনবিহীন স্থানে ওষুধ বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। লাইসেন্স, ফার্মাসিস্ট ও বিএমডিসি নিবন্ধন ছাড়া কোনো চিকিৎসা বা ওষুধ বিক্রি করা আইনবিরুদ্ধ।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সাজেদুল হক শাওন বলেন, ফুটপাত ও অনুমোদনবিহীন স্থানে স্টেরয়েড, শক্তিবর্ধক ট্যাবলেট, যৌন-উত্তেজক ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রেসক্রিপশন নির্ভর ওষুধ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে কিডনি-লিভারের ক্ষতি, অ্যালার্জি, হরমোনজনিত সমস্যা, যৌন অক্ষমতা এবং জীবননাশের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অনেক রোগী ইতোমধ্যে এ ধরনের ক্ষতিকর ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডা. শাওন আরও জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ড্রাগ সুপার, উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে অবৈধ দোকান ও ক্ষতিকর ওষুধ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তিনি স্থানীয়দের পরামর্শ দিয়েছেন, কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড বা শক্তিবর্ধক ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া সেবন করবেন না এবং অসুস্থ হলে নিবন্ধিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ফুটপাত বা রাস্তায় নয়, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায়ও অনেক ফার্মেসি রয়েছে, যা স্থানীয় লাইসেন্স নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। অভিযান করলে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়, ফলে কার্যকর পদক্ষেপ কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা ওষুধ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
উপজেলার মানুষ আশা করছেন, শিগগিরই অবৈধ ওষুধ ব্যবসার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাবে, যা তাদের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক হবে।

পাঠকের মতামত